X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভিবাসনের তুলনায় বাড়েনি রেমিট্যান্স

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:০৩আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩:২৭

২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে অভিবাসন বেড়েছে ১৩ শতাংশ, আর রেমিট্যান্স বেড়েছে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তবে যে পরিমাণ বাংলাদেশি শ্রমিক অভিবাসী হয়েছেন, সে পরিমাণে রেমিট্যান্স বাড়েনি। ২০২৩ সালে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার—যা এর আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২০২২ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০২৩, অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরু’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন ড. তাসনিম সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স এসেছে ২১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ সালের  তুলনায় ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২০২২ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে যে পরিমাণ বাংলাদেশি শ্রমিক অভিবাসন করেছেন, সে পরিমাণে রেমিট্যান্স বাড়েনি। ২০২৩ সালে অভিবাসন বেড়েছে ১৩ শতাংশ, আর রেমিট্যান্স বেড়েছে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ ছিল সৌদি আরব, যা এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশে নেমে এসেছে। সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২ দশমিক ৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১৪.৯৭ শতাংশ)। ২০২২ সালের তুলনায় সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

২০২৩ সালে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে, ৩৬ দশমিক৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট রেমিট্যান্সের ১৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০২২ সালে আরব আমিরাত ছিল তৃতীয় অবস্থানে। ২০২৩ সালে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রেরণের হার ৪.৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২৩ সালে রেমিট্যান্সে তৃতীয় অবস্থানে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (২৬.৮০ বিলিয়ন ডলার, ১২.২৩ শতাংশ), যা ২০২২ সালে ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। এর পরের দেশগুলো যথাক্রমে যুক্তরাজ্য (২৫.৩৬ বিলিয়ন ডলার, ১১.৫৭ শতাংশ), কুয়েত (১৫.০৭ বিলিয়ন ডলার, ৬.৮৭ শতাংশ) ও ইতালি (১৩.৩৭ বিলিয়ন ডলার, ৬.১০ শতাংশ)। দেখা যাচ্ছে, যে দেশে অভিবাসন বেড়েছে সেই দেশ থেকে রেমিট্যান্স বাড়েনি। যেমন, ২০২৩ সালে সৌদি আরবে অভিবাসন বাড়লেও রেমিট্যান্স বেড়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।

তাসনিম সিদ্দিকী লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, ২০২৩ সাল জাতীয় নির্বাচন-পূর্ব বছর হওয়ায় অভিবাসনের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ বছর। বিএমইটি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মোট ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন বাংলাদেশি কর্মী কাজের উদ্দেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছেন, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন বাংলাদেশি কর্মী অভিবাসন করেছিলেন। ১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৪৮ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ অভিবাসন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বাংলাদেশের অভিবাসন খাত হুমকির মধ্যে পড়েছিল। তবে ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের হার আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। করোনা মহামারির সময় যেসব অভিবাসী বিদেশে যেতে পারেননি, ২০২২ ও ২০২৩ সালে তারা অভিবাসন করেছেন। এছাড়া কোভিড-১৯-এর পরে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য অভিবাসী গ্রহণকারী দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু হওয়ায় চাকরির বাজারও উন্মুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের সৌদি প্রতিষ্ঠানে অভিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নির্ধারিত কোটা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার ফলে অভিবাসন বেড়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশ থেকেই ২০২২ সাল থেকে অভিবাসন বেড়ে চলেছে।

২০২৩ সালে মোট ৭৬ হাজার ৫১৯ জন নারী কর্মী কাজের জন্য বিদেশে গেছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। অর্থাৎ ২০২২ সালের তুলনায় নারী অভিবাসন প্রবাহ ২০২৩ সালে ২৭.৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৩ সালে মোট আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ হলেন নারী কর্মী, যা ২০২২ সালে ছিল ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রেও নারী অভিবাসন ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ সময় ড. তাসনিম সিদ্দিকী ৬টি সুপারিশও তুলে ধরেন। সেগুলো হলো:

২০২৫-২০৩৫ সালকে অভিবাসন দশক ঘোষণা করা। শ্রম অভিবাসন এবং ডায়াস্পোরার জন্য দুটি দিবস পালন না করে সব অভিবাসীর জন্য জাতিসংঘ ঘোষিত ১৮ ডিসেম্বরকেই অভিবাসী দিবস হিসেবে পালন করা হোক। ১৮ ডিসেম্বর পালনকে ‘গ’ তালিকাভুক্ত করার বদলে ‘খ’ তালিকাভুক্ত করা, রাজনৈতিক ইশতেহারে অভিবাসীদের বিষয়ে যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে, তার জন্য নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ করা হোক। অনলাইনে অভিযোগের যে ব্যবস্থা দীর্ঘকাল ধরে চালু ছিল তা দ্রুত ফিরিয়ে আনা।  আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনকে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর জলবায়ু অভিযোজনের পথ হিসেবে চিহ্নিত করা হোক। এক্ষেত্রে বিভিন্ন জলবায়ু বিষয়ক ফান্ড থেকে বিশেষ ঋণ প্রকল্প গ্রহণ করা এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের স্রোত ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোর প্রতি অভিবাসীদের আস্থা বাড়াতে হবে। স্বল্পমেয়াদি অভিবাসীদের বিভিন্ন বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে হবে এবং তা গণমাধ্যমে ও সামাজিক মিডিয়ায় প্রচার করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা। এছাড়াও ছিলেন রামরুর পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেরিনা সুলতানা, প্রজেক্ট ম্যানেজার রাবেয়া নাছরীন ও প্রজেক্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ ইনজামুল হক।

/এএজে/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
কয়েকটি দেশেই আটকে আছে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার
১০ মাসে এলো রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স
‘বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রণোদনা ৩ শতাংশ বিবেচনা করা হবে’
সর্বশেষ খবর
নাফনদ জেটিঘাট জনশূন্য, মাছ ধরা বন্ধ
মিয়ানমারে সংঘাতনাফনদ জেটিঘাট জনশূন্য, মাছ ধরা বন্ধ
টিভিতে আজকের খেলা (৯ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৯ মে, ২০২৪)
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এবার কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?
এবার কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?